Saturday 28 March 2020

সায়েস্তাবাদ নবাব বাড়ীর ইতিহাস

জনাব সিরাজুল ইসলাম ছিলেন বরিশালের কৃতি সন্তান এবং পেশায় মেজিস্ট্রেট। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সালের দিকে তিনি প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতেন এবং আমার মেঝ চাচা জনাব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন কামাল, যিনি পেশায় উকিল এবং বরিশাল ডিষ্ট্রিক্ট স্পোর্টস এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তার সাথে ছিল প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। বাকেরগঞ্জ এর ইতিহাস রচনা করেন আর সেই বই থেকে কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি। বইটির পিডিএফ সংরক্ষিত আছে, যার লিংক এখানে দেয়া হবে। 

+

শায়েস্তাবাদ পরগণা

১৬৬৬ খ্রি: সুবেদার শায়েস্তা খান বাকলা চন্দ্রদ্বীপ হতে মগ-পর্তুগীজদের তাড়িয়ে দেন। তার অভিযানে ইরাচ খান অপূর্ব সাহসের পরিচয় দেন। শায়েস্তা খান পুরস্কার স্বরূপ ইরাচ খাঁ কে চন্দ্রদ্বীপ হতে একটি ছোট পরগনা সৃষ্টি করে জায়গীর প্রদান করেন। শায়েস্তা খানের স্বরণে পরগনার নাম করণ করা হয় শায়েস্তাবাদ।

ইরাচ খাঁ এই পরগনা তার কন্যা উমাদানুন্নেসা কে দান করেন। নবাব পরিবারে তার বিয়ে হওয়ায় তাকে বৌ রানী বলা হত। বউ রানী মোহাম্মদ হানিফ চৌধুরীকে শায়েস্তাবাদ পরগনা ইজারা দেন। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এর ফেব্রুয়ারী মাসের এক পত্রে মীর আসাদ আলী বলেছেন, এ পরগনার মালিক ছিলেন তার নানা মোহাম্মদ হানিফ চৌধুরী। মোহাম্মদ হানিফ চৌধুরী শায়েস্তাবাদ এর আইচা গ্রামে বাস করতেন। তার পুর্বে চাখারের মেনদী মজুমদার এ পরগনার মালিক ছিলেন।   



নবাব সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন খানবাহাদুর পরিবারের গৌরব বৃদ্ধি করেন। মোয়াজ্জম হোসেন ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আরবী ও ফার্সী ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করেন এবং চাকুরী জীবনে ইংরেজি ভাষা আয়ত্ত করেন এবং জেলার প্রথম মুনসেফ ছিলেন। তিনি মাগুরা, নদীয়া ও ঢাকা জেলায় চাকুরী করেন এবং সদর আমিন বা সাবজজ হিসেবে ১৮৭০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। চাকুরী জীবনে কৃতিত্ব, জমিদারী পরিচালনা ও সমাজ সেবার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে খান বাহাদুর ও নবাব উপাধিতে ভূষিত করেন। জেলার মধ্যে তিনিই একমাত্র নবাব উপাধিধারী ছিলেন। পরিবারের ভাষা ছিল উর্দু। তিনি যে জুতা ব্যবহার করতেন তার নাম ছিল জমরত খান। তিনি তানজান নামক পালকিতে চড়ে শায়েস্তাবাদ থেকে বরিশাল আসতেন। শহরে ঘোড়ার গাড়ী ব্যবহার করতেন , আর সেই আস্তাবল ছিল, বরিশাল শহরের বর্তমান সদর রোডের কালী বাড়ির নিকটে।

তিনি খুব খাবার রসিক ছিলেন এবং এর জন্য বিখ্যাত খানসামা নিয়োগ দিতেন। তিনি শায়েস্তাবাদে রাহাত মঞ্জিল নামে সুন্দর ভবন নির্মাণ করেন। তার নির্মিত মসজিদে দামি পাথর খচিত কারুকার্য ছিল আর সুন্দর ঝাড়বাতি ছিল। ১৯০৯ সালের ৭ই অক্টবর ৯৯ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। ১৯১৯ - ২০ সালে নবাব বাড়িটি আড়িয়াল খাঁ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের পর মসজিদটিও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর পর পরিবারটি বরিশাল শহরে এসে বাড়ী কিনে (বর্তমান ফায়ার সার্ভিস) বসবাস করতে থাকেন। ১৮৮৭ সালে নবাব মোয়াজ্জম হোসেন নবাব আহসান উল্লাহর নিকট হতে জিলা স্কুলের নিকট একটি কুটি  বাড়ি কেনেন, যা পরবর্তীতে সায়েস্তাবাদ নবাব বাড়ি নাম পরিচিতি লাভ করে।

মোয়াজ্জেম হোসেন ৮ টি বিয়ে করেন এবং প্রথম স্ত্রী ছিল মৌলভীবাজারের আব্দুল আলীর মেয়ে। তার গর্ভে মিলন মিয়া আর ঝিলন মিয়ার জন্ম হয়। দুই ভ্রাতাই লন্ডন গমন করেন। তৃতীয় স্ত্রীর ঘরে মুহাম্মদ হোসেন জন্ম গ্রহণ করেন, যিনি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। দিনই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এবং বাংলা, ইংরেজি, আরবী, ফার্সি ও আরব্য বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি একটি সুবৃহৎ পাঠাগার গড়ে তুলেন, যা এই উপমহাদেশে সর্ববৃহৎ ছিল বলে মনে করা হয়। তিনি সাবরেজিস্ট্রার ও বাকেরগঞ্জের জেলা বর্ডার চেয়ারম্যাব ছিলেন। ১৯৩০ সালে তার মৃত্যু হয়।

মীর মোয়াজ্জেম হোসেন এর চতুর্থ পুত্র মীর মোতাহার হোসেন জেলার দ্বিতীয় ব্যারিস্টার ছিলেন এবং অশিনী কুমার দত্তের সাথে স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯০৪ সালে তিনি স্যার সলিমুল্লাহর সাথে ভারতের ভাইস রয় লর্ড কার্জনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি কলকাতা হাই কোর্টে আইন ব্যবসা করতেন। তার দুই বিয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন শ্রীমতি বেলা কুমারী। তার কন্যা সাহলিন বেগমের সাথে করটিয়ার জমিদার হায়দার আলী খান পন্নীর বিয়ে হয়। তাদের পুত্র বিখ্যাত সমাজসেবক করটিয়ার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী। মোতাহার হোসেন এর একমাত্র পুত্র সৈয়দ নেহাল হোসেন। নেহাল হোসেন বেগম সুফিয়া কামালের প্রথম স্বামী।  মোতাহার হোসেন ১৯১১ সালে মৃত্যু বরন করেন। তার পুত্র সৈয়দ নেহাল হোসেন ১৯৩৪ সালে অকালে প্রাণ ত্যাগ করেন।

মীর মোয়াজ্জেম হোসেন এর কন্যা সালেহা খাতুনের প্রথম বিয়ে হয় মীর তোফাজ্জেল আহম্মদ এর সাথে। তার পুত্র তজম্মুল হোসেন একমাত্র কন্যা ফারজানাকে রেখে ১৮৯৯ সালে মারা যান। ১৯০২ সালে কলকাতার সৈয়দ আশরাফ হোসেন এর পুত্র সৈয়দ সাহাদাত হোসেন (সাধু মিয়া) সালেহা খাতুনকে বিয়ে করেন।  তার প্রথম স্ত্রীর পুত্র সৈয়দ আহসান ফারজানাকে ( সাবাণী বিবি ) বিয়ে করেন। সাদু মিয়ার পুত্র ড: আহাম্মদ হোসেন। ড; আহম্মদ হোসেন এর পুত্র বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড; কামাল হোসেন।  আর সাধু মিয়ার কন্যা নুরজাহানকে বিয়ে করেন মীর তাজম্মুল হোসেন। সাধু মিয়া ১৯৪৯ সালে মৃত্য বরণ করেন। দেশভাগের পর সাধু মিয়ার পুত্র দ্বয় বরিশালে বসতি স্থাপন করেন।



মীর মোয়াজ্জেম হোসেন এর কনিষ্ঠ কন্যা সাবেরা বেগম এর বিয়ে হয় কুমিল্লা নিবাসী সৈয়দ আব্দুল বারীর সাথে। তিনি আইন ব্যবসা করতেন এবং তাদের এক পুত্র আলী ও এক কন্যা সুফিয়া কে রেখে তিনি হঠাৎ হারিয়ে যান। পরবর্তীতে সাবেরা বেগম অলি আর সুফিয়াকে নিয়ে শায়েস্তাবাদ এ পিত্রালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সুফিয়া বেগম (বেগম সুফিয়া কামাল) এর মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেন এর সাথে বিয়ে হয়। তাদের কন্যার নাম ছিল আমেনা বেগম।


সৈয়দ ফজলে রাব্বি 
সৈয়দ মুহাম্মদ হোসেন এর মৃত্যুর পর শায়েস্তাবাদ পরগনার জমিদারী নিয়ে মাঙলা হয়। জাষ্টিস এলিস সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনের কনিষ্ঠ পুত্র নবাবজাদা সৈয়দ ফজলে রাব্বি কে জমিদারির মোতাওয়াল্লী ঘোষণা করেন।  ১৯০১ সালে সৈয়দ ফজলে রাব্বি আয়েশা বেগমের ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৪ সালে মৃত্যু বরণ করেন।

সৈয়দ ফজলে রাব্বির স্ত্রী সালেহা খাতুন ওনার জীবদ্দশায় মৃত্যু বরণ করেন। 
সৈয়দ ফজলে রাব্বির স্ত্রী সালেহা খাতুন 

2 comments:

  1. আমি এই পরিবারের বংশধর...বর্তমানে সপরিবারে সায়েস্তাবদ এ বসবাস রত আছি..এই বইটি কোথায় পেতে পারি ?

    ReplyDelete
  2. আপনি আপনার পুরো পরিচয় দিবেন এবং বংশ তালিকা প্রদান করবেন তাতে করে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে।

    ReplyDelete